শীঘ্রই পানামা খালে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই

Passenger Voice    |    ১০:৫৩ এএম, ২০২৪-০৩-০৯


শীঘ্রই পানামা খালে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি-রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পানামা খাল। কয়েক বছরে খরার কারণে এ রুটে কমেছে জাহাজ পারাপার, যার প্রভাব পড়েছে পণ্য পরিবহনে। এখন পানামা খালের পুনরুজ্জীবন বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ধীরগতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই এ রুটে স্বাভাবিক হচ্ছে না জাহাজ চলাচল। খবর বিবিসি।

সুয়েজ খালের বিপর্যয় কয়েক মাস ধরে বারবার সংবাদের শিরোনামে এলেও অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে পানামা খালসৃষ্ট উদ্বেগ। কৃত্রিমভাবে তৈরি এ জলপথ নিয়ন্ত্রণ করে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা। জলপথটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। হিসাবমতে, পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে ১৩ হাজার কিলোমিটার ঘুরপথের ভ্রমণ কমিয়ে দেয় এ রুট। সে পথটিই কয়েক বছর ধরে পূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানামা খালের সমস্যার সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। এর পানিপ্রবাহ মূলত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খালে পানি সরবরাহ কমেছে। ২০২৩ সালে খরা ও এল নিনোর প্রভাবে ১১০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় শুষ্কতম বছর দেখেছে পানামা খাল। গত অক্টোবর ছিল সবচেয়ে শুষ্ক মাস। ওই সময় অঞ্চলটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে আটলান্টিক-প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটের ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কার্গো পরিবহন ব্যাহত হয়েছে।

স্বাভাবিক সময়ে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ সংক্ষিপ্ত এ রুট ধরে পরিচালিত হয়। মার্কিন কনটেইনারের ৪০ শতাংশই খালটি ব্যবহার করে। রুটটি ব্যাহত হওয়ায় পণ্য সরবরাহকারীরা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া পানামার রাজধানীসহ দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য পানির উৎসও এ খাল।

এদিকে পানির স্তর নিচে নেমে আসায় পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা গড়ে দৈনিক ৩৬ থেকে কমিয়ে ২৪টিতে2নামিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি ওজন কমিয়ে পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতাও দেয়া হয়েছে।

খাল নিয়ন্ত্রকদের দাবি, খালে পানিপ্রবাহের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা। এ পরিকল্পনা কাজ করলে আরো এক শতক বা তারও বেশি সময় ভালোভাবে কার্যকর থাকবে জলপথটি।

পানামা খাল কর্তৃপক্ষের টেকসইবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ইলিয়া এস্পিনো ডি মারোটা জানিয়েছেন, তারা স্থায়ী সমাধানের খোঁজে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না, এটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হোক। আমরা চলাচল ব্যাহত করতে চাই না।’

পাঁচ বছরে স্থায়িত্বের এক প্রকল্পে ৮৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে ইলিয়া এস্পিনো বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৃষ্টির স্বল্প দেখা গেলেও পানামা ভারি বৃষ্টিপ্রবণ একটি দেশ। বৃষ্টি স্বল্পতা এখন সর্বত্র প্রভাব ফেলছে। আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’

পানামা খালের প্রবাহের মূল উৎস গ্যাটুন ও আলাজুয়েলা হ্রদ। এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে জাহাজকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয়। প্রতিটি জাহাজ পারাপারে প্রায় পাঁচ কোটি গ্যালন পানির প্রয়োজন পড়ে। পানি সংরক্ষণে ২০১৬ সালে নতুন বাঁধ নির্মাণ করেছিল খাল কর্তৃপক্ষ। নিও-পানাম্যাক্স বাঁধ ৬০ শতাংশ পানি সংরক্ষণ করতে পারে। অন্যদিকে পুরনো ধাঁচের বাঁধগুলোও চালু আছে। পাশাপাশি জলাধার নির্মাণের কথাও বিবেচনা করছে খাল কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টির মাসগুলোয় আরো বেশি পানি সংরক্ষণ করতে এবং শুষ্ক সময়ে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য খালের কাছাকাছি ইন্দিও নদীতে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনাও করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে দিনে ১২-১৫টি জাহাজ বেশি পারাপার হতে পারবে।

তবে এসব পরিকল্পনার সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে না। কারণ প্রকল্পটি এখনো পানামার আইনসভায় অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো নির্মাণেও সময় লাগবে কয়েক বছর।

শুধু জাহাজ চলাচল নয়, ব্যবহার্য পানির কথাও ভাবছে পানামা। এ হিসেবে মিলিত বিকল্প হলো ডিস্যালিনেশন প্লান্ট। যার মাধ্যমে সমুদ্রের লোনা পানি থেকে লবণ অপসারণ করে স্বাদু পানি সরবরাহ করা হবে পানামা খালে। কিন্তু এ বিকল্প পরিকল্পনা বেশ ব্যয়বহুল। এজন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ জ্বালানি।

পানামা খাল হয়ে পরিবহনের শীর্ষ সময়ের তুলনায় বাণিজ্য বর্তমানে ৪৯ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য চলতি বছরে বেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। পানামা খালের যেকোনো বিপর্যয় এর প্রভাব আরো অসহনীয় করে তুলবে। তাই সমাধান খুঁজতে হবে দ্রুত।

প্যা/ভ/ম